WBP Interview part-9
১) NRC কি ?
NRC কে যদি সহজ ভাষায় বোঝানো যায় তাহলে বলতে হবে যে ১৯৭১সালের পর ভারতে যারা প্রবেশ করেছে তাদের সনাক্তকরণ।কিন্তু এই ১৯৭১ সালটি ধার্য করা হয়েছে আসামের জন্যই বাদ বাকি রাজ্যে কত সাল ধার্য হবে তা এখনো সঠিক ভাবে জানা যায়নি।
২) NRC কি সারা ভারতের জন্য?
সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুসারে প্রথমে NRC অসমে শুরু হয়।তখন অনেকেই ধরে নিয়েছিল NRC শুধু আসামের জন্য কিন্তু পরবর্তীতে কেন্দ্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়ে দেয় গোটা ভারতেই NRC হবে কিন্তু এই নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে মতপার্থক্য আছে।
৩) NRC প্রথম কোন রাজ্যে চালু হয়?
--আসাম
৪) NRC করা হয়েছে কি মুসলমানদের তাড়ানোর জন্য?
না এটা শুধুমাত্র গুজব ছাড়া কিছুইনা। NRC করা হবে শুধু বৈধ নাগরিকদের সনাক্ত করার জন্য।শোনা যাচ্ছে আসামে যেসব নাগরিকের নাম বাদ গেছে তাদের মধ্যে ৬০শতাংশই হিন্দু।
৫) বিজেপি কি NRC চালু করেছে?
অনেকে বলছে NRC চালু করেছে বিজেপি। কিন্তু তা সঠিক নয় আসলে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তি অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে NRC করা হয়েছে।এখানে বিজেপির কোনো ভূমিকা নেই।
৬) NRC করতে সরকারের কত খরচ হতে পারে?
আসামে NRC করতে খরচ হয়েছে ১২২০ কোটি টাকা।আর যদি তা সারা দেশে করা হয় তাহলে সরকারের খরচ হবে ৪৮০০০কোটি টাকার বেশি।
৭) পশ্চিম বঙ্গে কি NRC করা হবে?
পশ্চিম বঙ্গে NRC করা নাও হতে পারে কারণ, বর্তমান রাজ্য সরকার এর বিরোধিতা করছে তীব্রভাবে ।কেন্দ্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাই চাইলেও এই রাজ্যে NRC অতি সহজে করতে পারবে না। আসামে NRC করা হয়েছে তত্কালীন সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী। পশ্চিমবঙ্গে সেরকম কোনো চুক্তি নেই। তাই আসামের মতো সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই রাজ্যে NRC করা সহজ বিষয় না।
৮) NRC ও CAB বিলের মধ্যে সম্পর্ক কি?
CAB হল Citizenship Ammendment Bill। যাতে বলা হয়েছে মুসলমান বাদ দিয়ে অন্য যে কোন ধর্মের মানুষ যারা ২০১৪ সালের ৩১ শে ডিসেম্বরের আগে অন্য দেশ থেকে ভারতেএসেছে, শুধুমাত্র ধর্মীয় কারনে বিতাড়িত- তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু এই বিল এখনো পাশ হয়নি।আর এই বিল চালু করতে হলে NRC করতে হবে তখন বোঝা যাবে ধর্মীয় কারণে কারা বিতাড়িত হয়ে এদেশে এসেছে আশ্রয়ের জন্য।
৯) যদি NRC চালু হয় তাহলে কি কি ডকুমেন্ট লাগবে?
-আসামে হওয়া NRC -র ডকুমেন্টস অনুযায়ী যেটা জানা যাচ্ছে সেটি হলো ১৯৭১ সালের আগের ভোটার লিস্ট, জমির রেকর্ড, আর কিছু হিন্দুদের জন্য ১৯৭১ সালের আগের শরনার্থী কার্ড।
১০) NRC নিয়ে বাংলার রাজনৈতিক দলের কি ভাবনা?
বাংলায় NRCর পক্ষে আছে বিজেপি এবং এর তীব্র বিরোধিতা করছে তৃণমূল ও বামফ্রন্ট ।কংগ্রেস নিরপেক্ষ মত পোষণ করেছে।
১১) NRC নিয়ে এখন আপনার মতে কি করা উচিত?
NRC নিয়ে বেশি ভাবার প্রয়োজন নেই।রাজ্যে NRC হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া না গেলেও তা ২০২১পর্যন্ত এই সরকারের আমলে হচ্ছে না তা নিশ্চিত।তাই এখন বেশি ভাবার দরকার নেই ।
১২) ভারতীয় নাগরিকদের উপর প্রভাব ফেলবে CAA?
-ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে CAA-র কোনও সম্পর্ক নেই। এদেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের উল্লেখ রয়েছে ভারতীয় সংবিধানে। CAA বা এই সম্পর্কিত কোনও আইন তা খর্ব করতে পারে না। এই সম্পর্কিত ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। মুসলিম-সহ ভারতীয় নাগরিকদের উপর CAA-র কোনও প্রভাব পড়বে না।
১৩) CAA কাদের জন্য?
- ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে বিতাড়িত হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের জন্য CAA। ওই তিন দেশ বা অন্য কোনও দেশ থেকে আসা মুসলিম-সহ অন্য কোনও বিদেশি শরণার্থীদের জন্য CAA লাগু হবে না।
১৪) ওই তিন দেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের কীভাবে সুবিধা হবে CAA থেকে?
পাসপোর্ট বা ভিসার মতো নথি না থাকলেও ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যাবে। CAA-র মাধ্যমে এই শরণার্থীরা এমন সুযোগ পাবেন। দ্বিতীয়ত, ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য তাঁদের আবেদনের রাস্তা আরও মসৃণ হবে। এদেশে বসবাসের ন্যূনতম সময় ১+১১ বছরের পরিবর্তে ১+৫ বছর হবে।
১৫) এর মানে কি এই যে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের মুসলিমরা কখনই ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবে না?
- না। এমন কোনও লক্ষ্যে CAA গঠন করা হয়নি। বিগত বছরগুলিতে ওই দেশগুলি থেকে শতাধিক মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও যোগ্যতার বিচারে নাগরকিত্ব পাবেন তারা। ধর্মের বিচারে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না।
১৬) উক্ত দেশগুলি থেকে এদেশে এসে অবৈধ ভাবে বসবাস করা মুসলিমদের কি বিতাড়িত করা হবে?
- না। কোনও নাগরিকের বিতাড়নের সঙ্গে CAA-র কোনও সম্পর্ক নেই। ১৯৪৬-এর বিদেশি আইন ও ১৯২০-র পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। বিদেশি নাগরিকদের ভারতে প্রবেশ এবং প্রস্থান সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত এই দুই আইনের ভিত্তিতেই নেওয়া হয়। কোনও ব্যক্তির ধর্ম বা দেশের ভিত্তিতে নয়।
১৭) ওই ৩ দেশে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারের শিকার হওয়া হিন্দুরা কি CAA-র জন্য আবেদন করতে পারবেন?
- না। তাদের অন্য ধর্মের বিদেশি নাগরিকদের মতোই আগের পদ্ধতিতে আবেদন করতে হবে। CAA থাকলেও ১৯৫৫-র নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, তারা কোনও অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন না।
১৮) বর্ণ, লিঙ্গ, রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য, ভাষা ইত্যাদির বিচারেও কি আবেদন করা যাবে CAA-র মাধ্যমে?
- না। CAA-র বিবৃতি অত্যন্ত স্পষ্ট। তিন পড়শি দেশের ছয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিদেশি নাগরিকরাই শুধু এই আবেদন করতে পারবেন। অন্য কোনও দেশের বিদেশি নাগরিক নাগরিকত্ব আইন (১৯৫৫) অনুযায়ী ন্যূনতম শর্ত পূরণের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
১৯) CAA-র কারণে ধীরে ধীরে ভারতীয় নাগরিকত্ব হারাবেন মুসলিমরা?
- CAA কোনও ভারতীয় নাগরিকের উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না। সব ভারতীয় নাগরিকরাই তাদের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার পাবেন। কোনও ভারতীয় নাগরিককে তার নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করবে না CAA।
২০) CAA-র পর NRC হবে এবং মুসলিম বাদে সব শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এবং মুসলিমদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে?
- NRC-র সঙ্গে CAA-র কোনও সম্পর্ক নেই। ২০০৪ সালের ডিসেম্বর থেকেই ১৯৫৫-এর নাগরিকত্ব আইনের সঙ্গে আইনত সংযুক্ত NRC। ভারতীয় নাগরিকদের রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি এবং জাতীয় পরিচয় পত্র সম্পর্কিত বিষয়ের সঙ্গে তা জড়িত। বিগত ১৫-১৬ বছর ধরে এই আইন রয়েছে। CAA আলাদা করে এতে কোনও পরিবর্তন আনেনি।
২১) CAA-র অধীনে নাগরিকত্বের নিয়ম কী কী?
-CAA-র ভিত্তিতে নিয়মগুলি এখনও গঠন করা হচ্ছে। CAA-র বিভিন্ন আইনি দিক দেখেই তা কার্যকরী হবে।
২২) CAB এবং NRC
CAB অর্থাৎ সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল (Citizenship Amendment Bill)। এই বিলে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, এবং শ্রীলঙ্কা থেকে যথাক্রমেঃ হিন্দু , শিখ, পার্সি, জৈন, খ্রিষ্টান, এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী যে সকল মানুষ কোনও রকম বৈধ অনুমতিপত্র ছাড়াই, ভারতবর্ষে বসবাস করছেন, তারা ভারতের নাগরিকত্ব পেতে পারেন।
NRC অর্থাৎ ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস (National Register of Citizens) হল ভারতীয় নাগরিকপঞ্জী। ভারতবর্ষে একমাত্র আসাম রাজ্য তাদের নিজস্ব নাগরিকপঞ্জী প্রকাশ করেছে। এই নাগরিকপঞ্জীতে যাদের নাম থাকবে, একমাত্র তারাই ভারতের বৈধ নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন। সেক্ষেত্রে আসামে বসবাসকারী হিসেবে নাগরিকদের অনুপ্রবেশের সময় সীমা 1971 সালের 24শে মার্চ অবধি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, ওই তারিখের পরে যারা অনুপ্রবেশ করেছেন, তাদের নাম নাগরিকপঞ্জীতে থাকবে না।
No comments:
Post a Comment